রবিবার, ৪ জুন, ২০১৭

কবিতা



রোজাধার
সাদেক আহমেদ
....................
https://www.facebook.com/sadekpoet

রমজানের চাঁদ দেখে রোজা হ শুরু ইবাদতে মশগুল হ খোদা ভিরু
রমজানের মর্মবাণী যদি মুমিন বুঝে  খোদার দিদার এই মাসে নেয় যেন খোঁজে
ভোগ বিলাসের মধ্য দিয়ে এগার মাস শেষে সংযমের শিক্ষা পায় পবিত্র এই মাসে
দিনেরবেলায় রোজাধার বুঝতে পারে স্পষ্ট অনাহারে থাকে যেজন কতযে তার কষ্ট
পাপমুক্ত থেকে মন করতে পারে সাফ বরকতময় রোজার মাসে হয় গুনা মাফ
মিথ্যাচার আর পাপাচারে নয় রোজধার লিপ্ত পরের কথায় পরের কাজে হয় না কভু ক্ষিপ্ত
ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি দিতে হবে ছাড় কারও কথায় কষ্ট পেলে বলবে আমি রোজাধার
হালাল খেয়ে রাখবে রোজা একাগ্র চিত্তে তা না হলে কষ্ট শুধুই সব হবে মিথ্যে
খোদা ভীতি প্রেম যদি মনে না জাগে লাভ কী উপবাসে পানাহার ত্যাগে
রোজাধার পায় সুখ আত্মশুদ্ধির মাঝে রোজা রাখার পুরষ্কার মহান শ্রষ্টা নিজে





বনোফুল
.................
সাদেক আহমেদ
নির্জণ অরণ্যে একা একা
ঋজুপথ মারিয়ে আমি চলছি
নাম না জানা-
কতনা বৃক্ষ-তরুলতা চোখেঁ পড়ে
প্রয়োজন বোধ করিনি
আর একবার চোখ ফিরিয়ে দেখবার
আমি নি:সঙ্গ আমি একা-
চলতে চলতে আজ আমি ক্লান্ত
বন্দুর পথে হাটতে হাটতে
পা ফেটে যখন রক্ত ঝরে
তখন চোখে পড়ে
গুল্মলতায় ঘেরা এক বনোফুল
আরও সামনে এগুতে চাইলাম
পদযুগল অবশ হয়ে এলো
থমকে দাঁড়ালাম পুথে
ফিরে ফিরে বার বার
কেবলই দেখি সেই বনোফুল
যার চার পাশে কাটাঁয় ঘেরা গুল্মলতা
বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের অবাধ বিচরণssবদলে গেছো
...............
সাদেক আহমেদ
আমি তুমাকে দেখেছি
আপাদমস্তক দেখেছি
বিশ্বাস কর আর নাইবা কর
যে ষুখ আজও খোঁজি
কখনও তা পইনি

তোমার তপ্ত নিশ্বাস
আমায় অস্থির করে তুলে
কল্মিলতার ডগার মতো
জড়িযে ধর তুমি
তবুও যেন দুনার মাঝে
দিগন্ত বিস্তৃত ব্যবধান

জানি তুমি ভুলে গেছ
সকল স্মৃতি,সকল কথা
বদলেফেলেছ স্বপ্ন
ভেঙে দিয়েছ বিশ্বাস








চোখের জল
..................
সাদেক আহমেদ

তোমার চোখের নোনা জল
বাষ্প হয়ে জম্বে আকাশে
কোন এক বৈশাখে
তীমিরে ঢেকে যাবে আকাশ
ঝড়ের তান্ডবে
সাজানো গোছানো স্বপ্নবাসর
ভেঙে হবে খানখান
সে তো আমি চাই না
তুমার মনের বেদনার কষ্ট
বিষাদের নোনাজল
কপোল গড়িয়ে পরবে উর্বর ভূমিতে
মাটি হারাবে উর্বরতা
সৃষ্টি হবে ঊষর মরুর
দোসর বলাভূমি
সে তো আমি চাই নালেনদেন সাদেক আহমেদ
................
হারায়ে জীবনের সব লেনদেন স্মৃতির এলবামে থাকা ছবি কথা কয় অতীতের সেই সুখের স্মৃতিগুলো যখন চারি দিক থেকে আমায় অক্টোপাশের মতো আকড়ে ধরে আমি হারিয়ে যাই এক যন্ত্রনার সাগরের অতলায়তনে
**বন্দু তুমি সাএদক আহমেদ
................................
মনে পড়ে বন্ধু তুমি কয়েকটি দিন আগে আমার পাশে বসতে হেসে মধুর অনুরাগে... সেদিন বুকে প্রেম ছিলো তোর ছিলো না ভয় -ডর কথা দিয়ে ছিলে তুই বাধবে সুখের ঘর সেসব কথা এখন কী আর তোর পড়ে না মনে আমরা দুজন বিভুর ছিলাম মধুর আলিঙ্গনে নানান স্হানের কত স্মৃতি কি করে যাস ভুলে সুখের কথা স্বপ্নগাঁথা বলতে মন খুলে আমার বুকে মাথা রেখে রাত করেছিস পার বাকী জীবন এমন সুখ তুই পাবে না আর হয়তো আবার কারো বুকে রাখবে তুই মাথা তোর মনে পড়বে তখন এই আমারই কথা তোর গায়ের ঘামের গন্ধ আজো শুকতে পাই তাই তো আমার মনটা বলে তোর কাছে যাই র গায়ের ঘামের গন্ধ আজো শুকতে পাই তাই তো আমার মনটা বলে তোর কাছে যাই পূর্বে প্রকাশের পর
তোর গায়ের ঘামের গন্ধ আজো শুকতে পাই তাই তো আমার মনটা বলে তোর কাছে যাই প্রতারণার অগ্নি জ্বেলে সব করেছিস ছাই তোর সেই আদুরে ডাক শুনতে নাহি পাই বুকে বইবে দমকা হাওয়া দেখবে সর্ষে ফুল চোখের জলে ভেসে বলবে সব করেছি ভুল
**সোনামণি সাদেক আহমেদ
...........................
আম্মু বলে পড়রে সোনা আব্বু বলে মন দে, লেখা পড়ার চাপে সোনা পড়তে বসে কান্দে ঘুম ভাঙ্গার আগে সোনার মা বলে তুই উঠ, বাবা বলে সময় যে যায় কোচিং করতে ছুট কোচিং করতে যায় সোনা নাস্তা খেয়ে কিছু, তড়িঘড়ি করে ছুটছে মা যাচ্ছে তার পিছু কোচিং করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে আবার স্কুলে, একটু সময় পায় কি সো
**কাব্যচর্চার কথা সাদেক আহমেদ
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার তাকিদ ইসলাম ধর্মে শুরু থেকেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানব জাতিকে দেওয়া হয়েছেমহাগ্রন্থ আল কোর আনের প্রথম বাণীতেই মানব জাতিকে শিালাভের তাকিদ দেওয়া হয়েছেমহানবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)তাঁর উম্মতদের বলেছেন জ্ঞান অর্জনের জন্য তোমরা প্রয়োজনে চীন দেশে যাওআজ থকে চৌদ্দশত বছর আগের দুনিয়া আর বর্তমান পৃথিবীর পার্থক্য অনেকযেসময়কে আরবের ইতিহাসে অন্ধকার যুগ বলা হতো ঠিক সেই সময়ে চিনদেশ ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় অনুকরণীয়মোদ্দাকথা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও সেটি অর্জনের জন্য মানুষ যেন যেকোন জায়গায় যে কারো কাছে যেতে আগ্রহী হয় এমনটিই বোঝাতে চেয়েছেনমানুষ জ্ঞান অর্জন করে,বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে দেহের শক্তি দিয়ে কল্যাণকর কাজ করে তাই মানুষ সৃষ্টির সেরাজ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও গুণীলোকের মহীমা কেবল নবী রাসূলগনই বর্ণনা করেগেছেন তা নয়যুগে যুগে যেসকল মানুষ সুখী-সমৃদ্ধশালী মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন তারা সকলেই জ্ঞন অর্জন ও গুণী লোকের মহীমা বর্ণনা করেছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত শাখা- প্রশাখা আছে তার মধ্যে সাহিত্য একটি অন্যতম শাখা কবিতা সাহিত্যেরই একটি অংশএকজন প্রাবন্ধিক একটি বৃহকলেবরের প্রবন্ধ লিখে যে আবেদন মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেন একজন কবি তার দুই চার পঙ্কতির কবিতার মাধ্যমে অনায়েশে তা করতে সম হনতাই ইসলাম ধর্মে কবিতা লিখা ও কবিতা পাঠে মানুষকে উসহিত করার জন্য বিভিন্ন হাদিস ও কোরানের সুষ্পষ্ট আয়াত বর্ণিত আছেমহাগ্রন্থ আল কোরআনে আশশুয়ারানামে একটি সুরা রয়েছেআশশুয়ারাযার অর্থ কবিগণ এই সুরার ২২৪ নং আয়াতে (বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরন করে),২২৫ নং আয়াতে (তুমি কি দেখ না তারা প্রতি ময়দানেই উদভ্রান্ত হয়ে ফিরে?) ,২২৬ নং আয়াতে (এরা এমন কথা বলে,যা তারা করে না) ও ২২৭ নং আয়াতে (তবে তাদের কথা ভিন্ন,যারা বিশ্বাস স্থাপন করে,কর্ম করে এবং আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করেনিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়।) পবিত্র কোরআনের উপরুক্ত আয়াতসমুহে কবিদের স্বরূপ ব্যখ্যা করা হয়েছেবস্তুনিষ্ঠতা বর্জিত,মানুষের গীবত ও কুসা এবং শালীনতা বর্জিত কবিতা রচনাকারী কবিদের উপহাস ও কঠিন পরিণতির কথা যেভাবে কোরআনের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,বস্তুনিষ্ঠ,মানুষ ও সমাজের জন্য কল্যাণকর এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে রচিত কবিতা ও কবিদের প্রশংসা ও পুরষ্কারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছেফতহুল বারীর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে এই আয়াত অবর্তীণ হবার পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা,হাস্সান ইবনে সাবেত ও কাব ইবনে মালেক প্রমুখ সাহাবীকবিগন ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসূল (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজ করেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেছেনআমরাও তো কবিতা রচনা করিএখন আমাদের কী উপায়? রাসূল (সাঃ) বললেন,আয়াতের শেষাংশ পাঠ করউদ্দেশ্য ছিলো এই যে,তোমাদের কবিতা যেন অনর্থক ও ভ্রান্ত উদ্দেশ্যপ্রনোদিত না হয়কারণ তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লেখিত ব্যতিকত্রমীদের শামিলতাফসীর কারকগণ বলেন এই আয়াতের প্রথমাংশে মুশরিক কবিদের বুঝানো হয়েছেকেন না পথভ্রষ্ট লোক,অবাধ্য শয়তান,উদ্ধত জিন তাদের কবিতার অনুসরণ করতো এবং তা বর্ণনা করতোইসলাম পূর্ববর্তী যুগেও আরবে কবিতার চর্চা হতোগোত্রে গোত্রে কবিদের কবিতার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হতো সেরা কবিদের বাছাই করা কবিতাগুলি জনসাধারণের দেখানোর জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হতোহযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়াত লাভের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এমন মেধাবী কবিদের কবিতা অন্ধকার যুগের সেই আরবের মানুষের মাঝে ইসলামের মাহাত্ম প্রচারে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেহযরত মোহাম্মদ(সাঃ) অনেক কবির কবিতা শুনে কবিকে প্রশংসা করেছেন উপহার উপঢৌকন দিয়েছেনএমনি একজন কবির কবিতা শুনে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একদিন নিজের পরনের চাদর খুলে কবির গায়ে জরিয়ে দিয়ে ছিলেনসেই কবিতাটির নামাকরণ করা হয়েছিলো কাছিদায়ে বুর্দাযা বর্তমানে আরবি সাহিত্যে একটি উল্লেখ্যযোগ্য কবিতাহিসাবে স্থান দখল করে আছে যখন কুরাইশ গোত্রের লোকেরা রাসূল (সাঃ) এর কুসা রটনা করতে লাগলো তখন রাসূল (সাঃ) কবি হাসান বিন সাবিতকে নির্দেশ দিলেন তুমি আবু বকর এর কাছে যাও,তার নিকট থেকে কুরাইশদের দোষ-ত্রুটি জেনে নিয়ে তুমি তাদেরকে কটা করে কবিতা রচনা করকবিসাহাবী হযরত কাব বিন মালিক থেকে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন রাসূল(সাঃ) বলেছেন যাও তোমরা মুশরিকদের বিপে কবিতার লড়াই এ নেমে যাও, কারণ মুমিন জিহাদ করে জান ও মাল দিয়ে,মোহাম্মদের আত্মা যার হাতের মুঠোয় তার শপথ তোমাদের কবিতা তীরের ফলার মতো তাদের কলিজা ঝাঝরা করে দেবেবস্তুনিষ্ঠ,সত্য-সুন্দর, মানুষ ও সমাজের কল্যাণে কবিতা চর্চার জন্য রাসূল (সঃ)বলেছেন যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ সে কবিতা সুন্দর আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয় সেসকল কবিতায় কোন মঙ্গল নেই,যেসকল কবিতায় অশী­লতা থাকে, সমাজের অকল্যাণ হয় সত্যের অপলাপ হয় সেসকল কবিতা ও কবিদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)বলেনতোমাদের কারও পেটে কবিতা থাকার চেয়ে সে পেটে পূজ জমে তা পঁচে যাওয়া অনেক উত্তম বিশ্বায়ণের এ যুগে মানুষ এগিয়েছে অনেক দূরঁজ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রচার প্রসারের ফলে মানুষের জীবন যাপন অনেক উন্নত হয়েছেতার সাথে মানুষের চাহীদাও বেড়েছে অনেক গুণঅন্ন-বস্ত্র বাসস্থান ছাড়াও সাহিত্য-সংস্কৃতি ও মননশীলতার চর্চার েেত্রও নানান নতুন মাত্রা যোগ হয়েছেসকলকিছু সম্ভব হয়েছে মেধাবী মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্ঠা ও মননশীলতার ঊম্মেষ ঘটার ফলেমানুষের নৈতিক অবয়,মূল্যবোধের অভাব ও যুবসমাজের মধ্যে শন্ত্রাস এবং মাদকের ভয়াবহতা রোথে,সুখী-সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কাব্য চর্চা হতে পারে এক অনন্য মাধ্যম যদি তা কুপমণ্ডুকতার গন্ডি পেরিয়ে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়বস্তুনিষ্ঠ,সত্য-সুন্দর,অন্যায়ের প্রতিবাদে ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কবিতা লিখা বা ককিতা পাঠ করা পাপ নয়আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজারুল ইসলামের গান ও কবিতা শুনলে মনে ধর্মীয় অনুরাগের ঝড় ওঠেতাই কবিতার ভাব ভাষা ও ছন্দের গাথুনি হতে হবে সত্য-সুন্দও ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের ল্েয
*****শোষণ সাদেক আহমেদ
................
https://www.facebook.com/Kalersamachar.bd/ মোগল গেল পাঠান গেল স্বধীন হলো দেশ, আমজনতার দুঃখ-কষ্ট হলো না তাও শেষ শিল্পপতি টাকার জোরে দাপট দেখায় সবখানে, তাদের টাকার উত্স কোথায় দেশের মানুষ সব জানে নিয়ম-নীতির ধার থারে না যা খুশি তাই করে, তাদের হাতে জিম্মি সবাই কেও না তাদের ধরে টাকার নেশায় পাগল তারা করছে মানুষ শোষণ, আশেপেোশর কিছু লোক করে তাদের তোষণ টাকা দিয়ে এ জগতে সকল কিছু হয় না, মরার পর তাদের নাম শ্রদ্ধাভরে লয় না
**ফেলে আসা দিন
......................
সাদেক আহমেদ কত দিন হয় তোমাকে দেখি না সেই কবে কোন এক মঙ্গলবারে মনে হয় ঠিক ভোর পাঁচটায় তোমার ফোন পেয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গে তড়িগড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রিক্সা নিয়ে তুমি আমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো ঢাকার উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যাবার তখনও অনেক সময় বাকি তোমাকে কি যে অস্থির দেখা যাচ্ছিলো তখন তা আজও মনে পড়ে, সেদিন আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম আমার বাম হাতটি ধরে সেদিন তুমি আমার পাশে ছিলে সারাক্ষণ ট্রেন যখন সামনে এগিয়ে চলে জানালা দিয়ে সবুজ গাছপালা ফসলের বিস্তৃত মাঠ আমার দেখতে বড্ড ভালো লাগে তাই আমি কোন এক সময় দীর্ঘক্ষণ ওদিকে তাকিয়ে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখছিলাম এমন সময় তুমি মুখ ভার করে বলেছিলে আমি যার মুখ দেখে সকল দুঃখ ভুলে যাই সে যদি মুখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে তবে আমার বড্ড কষ্ট হয়! ঢাকার সেই রমনা পার্ক ঠিক আগের মতই আছে সুধু তোমার মনের ক্যানভাস থেকে মুছে গেছে তোমার খোপায় পড়িয়ে দেয়া গুলাপ তোমার হাতে আমায় দেয়া বকুল ফুলেল মালা দুজন দুজনের হাত ধরে ছোট্ট ছোট্ট কদমে হাটতে হাটতে ভালো লাগা মন্দ লাগার গল্প কথায় সেই মধুময় ক্ষণগুলো
********একলা সাদেক আহমেদ একলা চলার মানুষ তো নই তবুও যখন একলা থাকি একলা আমি পথ চলি একলা আমি কথা বলি সবার মাঝে থেকেও আমি আমার মাঝে একলা আমি একলা আমি স্বপ্ন দেখি তোমায় নিয়ে গল্প লিখি সুখের স্মৃতির বিমূর্তরূপ ওটাও আমি একলা দেখি আমার পথে একলা আমি আমার মতে একলা আমি আমার চাওয়া শুধুই তুমি আমার কাছে সবচে দামি
**অশ্রু সাদেক আহমেদ ভালোবেসে তুমি যেটুকু দিয়েছো আমি জানি তা শ্রেষ্ট উপহার প্রথিবীতে বলো এমন কি আছে বলবো আমি তার সমান? যতনে রেখেছি তারে মনের মন্দিরে কখনো নয়ন জলের প্লাবনে ভাসি তবুও তাকে বুকের ভেতর আগলে রাখি আমাকে ভুলে যাবে? চেষ্টা করে দেখ কোন লাভ নেই বাতাস এসে কানে কানে বলবে তুমি আমার অতীতের সেই স্মৃতি তোমায় পথ আগলে দাঁড়াবে তুমিও সেদিন ভাসবে চোখের লোনা জলে
***দীর্ঘশ্বাস সাদেক আহমেদ আমাকে ঠিক আগের মতো মনে পড়ে কি না জানি না যে কথা তুমি বলো দুচোখ মেলে তোমার যে লেখ আমি দেখি তাও আজ বিশ্বাস করতে বড় কষ্ট হয় বিশ্বাসের রোদে পোড়ে আমি যখন অঙ্গার তোমার পথে চলতে চলতে যখন আমি ক্লান্ত তখন একটি দীর্ঘশ্বাসের অনলে পুড়িয়ে করে দিলে সব কিছু বিরান ভূমি তুমি তো বলেছিলে সেদিন মরুর বেলাভূমিতে সাজাবে উদ্যান পাথরের বুকে ফোটাবে ফুল তবে কেন আজ দূরাকাশের তারা হয়েে আকাশের বুকে জোনাকীর মতো জ্বলতে চাও? নয়নের আলো যদি নিভে যায় দূরাকাশের তারার আলোর মূল্য কি আর ?
**যুগে যুগে প্রেম সাদেক আহমেদ নারী-পুরুষষের গভীর আস্থা, পারষ্পরিক নির্ভশীলতা ও প্রচন্ড আবেগের সুতোয় বাঁধা যে সম্পর্ক তারই নাম প্রেম বাংলাভাষায় এর প্রতি শব্দ ভালোবাসাবাংলাভাষাবাসি যারা তারা আমি তোমাকে ভালোবাসিবলে একে অপরকে তার ভালোবাসার কথা জানায়পান্তরে ইংরেজি ভাষাবাসি যারা তারা আই লাভ ইউবলে ভালোবাসার কথা জানায়হিন্দি ভাষাবাসি যারা তারা মুজে তুমসে পিয়ার কারতিহুবলে ভালোবাসার কথা জানায়বাংলা, ইংরেজি, আরবি,উর্দু হিন্দি ফার্সি নাগরি যে যে ভাষায়ই তার ভালোবাষার কথা জানাক না কেন তার জন্ম মানুষের মস্তিষ্কেচোখ দিয়ে দেখে ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে মানুষের মগজে তৈরি হয় এর মূল রসায়নবয়স বিবেচনায় মানুষের দৈহিক কর্মকা-ে বা সারিরিক কাঠামোতে রদবদল দেখা গেলেও ভালোবাসায় কখনো জোয়ার-ভাটা দেখা যায় নাছুট্ট একটি শিশুও কাঁদতে জানে-হাসতে জানেমায়ের আদর সোহাগে আমরা তাকে হাসতে দেখিএকটুখানি কষ্ট পেলে আমরা তাকে কাঁদতে দেখিতাই প্রেমের কোন বয়স নেই নর-নারী শিশু, যুবক, বৃদ্ধ যে বয়সেরই হোক না কেন তার উর্বর মস্তিষ্কে প্রেমের ফসল চাষ হওয়াটাই স্বাভাবিকবয়স, পারষ্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক-ভৌগোলিক অবস্থার ভিন্নতার কারণে এর প্রকাশধরন ও স্বরূপ ভিন্নতর হতে পারেপ্রেমের নির্দিষ্ট কোন সজ্ঞা নেইযুগে যুগে কবি সাহিত্যিক ও দার্শনিকগন এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবেকেউ বলেছেনদুজন নির্বোধ মানুষের নিরর্থক কাজ হচ্ছে প্রেমপন্ডিত রুজম বলেন,বিরহের ুেবদনাই প্রেমটলস্টয় বলেন,প্রেমবিবাহকে পবিত্র করে আর বিবাহ প্রেমকে পবিত্র করেএক দিন প্লেটু তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে ছিলো-প্রেম কি? তিনি বলেন ঐ যে মাঠে গমের ফসল দেখতে পাচ্ছ তার মধ্য দিয়ে হেটে যাও গমের যে শিষটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালোলাগবে সেটি আমার কাছে নিয়ি এসো, কখনো পেছনে ফিরবে না, পেছনে ফেলে আসা গমের শিষ হাতে নেবে নাকথামতে প্লেটু একটি গমের শিষ এনে দিলেন শিক্ষক বললেন কি দেখতে পেয়েছ? প্লেটু জানান আমি যখন শষ্যের মাঠ দিয়ে সামনে এগুচিছলাম তখন যে গমের শিষটি চোখে পড়েছিলো সেটি আমার ভালোলেগেছিলো তবে মনে হয়েছিলো আর একটু সামনে এগয়ে দেখিএভাবে সবশেষে যে গমের শিষটি আমি দেখতে পেলাম তা দেখে মনে হয়েছিলো আগেরটিই হয়তো এর চেয়ে ভালো ছিলোশিক্ষক বললেন এটাই প্রেমমহাকবি কালিদাস-মানদিপা, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও- জুলিয়েট, বেহুল-লক্কিন্দর, রাম-সীতা, রাধা-কৃষ্ণ, রজকীনি-চন্ডি দাস, উইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টা ও ইউসুফ-জুলেকা জয়ানন্দ-চন্দ্রাবতী এই পবিত্র মন্ত্রে দিা নিয়েই আজও অমর হয়ে আছেনসম্রাট শাহজান তাদেরই একজন উত্তরসুরি যিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার স্মৃতির মিনার সাজিয় ছিলেন যমুনা নদীর তীরে আগ্রাবাদে র্স্বণখচিত সুরম্য প্রাসাদ তাজমহল নির্মাণ করেজগতে এমন অসংখ্য সৃ্িষ্ট অকৃত্তিম ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে টিকে আছে পৃথিবীর ইতিহাসেশতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সকল মানুষের কাছে তারা কিংবদন্তির রূপকারতাদের নিয়ে আজও কবি লিখেন কবিতা,নাট্যকার লিখেন নাটকসময় বদলায় পারিপার্শিক অবস্থার পরিবর্তন হয় ভালোবাসার স্বরূপ বদলায় না কোন কালেওএ যেন সর্বকালে সর্বজনের কাছে স্বরূপেই আবির্ভূত হয়আজকে হয়তো কৃষ্ণের বাশীর সুরে রাধা পাগল হয়ে বকুল তলে ছুটে আসে না, অশ্বারোহী রাজকুমার তার প্রেমিকাকে পাবার উম্মাদনায় যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, সুন্দরী নারীর প্রেমে পাগল হয়ে রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে কোন দেশ কোন জনবসতি বা কোন সভ্যতা ধ্বংস করে নাযেভাবে হেলেনের প্রেমের অনলে পুড়ে ধ্বংস হয়েছিলো ট্রয় নগরীউইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টার প্রেমের মর্মন্তুদ পরিনতীতে ধ্বংস হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়াধুঁয়া,টাকা ও প্রেম এই তিন বিষয় কখনো গোপন থাকে নাযদিও প্রেমে পক্ষ দুটি তবুও প্রথমে ঘনিষ্ঠজন পরে বন্ধু-বান্ধব,তারপর আত্মিয়স্বতজন ও পরে পাড়া-প্রতিবেশি বিষয়টি জেনে যায়কখনো কখনো শুরু হয় নতুন বিপত্তিসুদুর অতীত থেকে অদ্যবধিই এমন বিপত্তির শিকার হয়ে পরিবার থেকে বিতারিত হয়েছে, সমাজ থেকে বিতারিত হয়েছে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছেযিশুখীষ্টের জন্মের বহু আগে মহাকবি কালি দাসের জগ বিখ্যাত সৃষ্টি মেঘদু প্রেমের এমনই এক বেদনাবিদুর পরিনতির ফসলমহা কবি কালিদাস ও তার প্রিয়তমা মান্দিপার প্রেমের খবর প্রকাশের পর কালিদাসকে তার জনপদ থেকে এক নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলোএকাকী জীবনের কষ্ট আর প্রিয়তমার অনুপস্থিতিজতনিত হৃদয়ের ব্যকুলতা এমনি মূহুর্তে আকাশে ভাসমাণ মেঘমালার দিকে তাকিয়ে তিনি মনের যে আকোতি প্রকাশ করতেন তাই মেঘদুকাব্যগ্রন্থের কাব্য পংক্তি তবে এ যুগেও মানুষ প্রেম করে প্রেমিক মন মানে না কোন শাসন বারণ তবে এ যুগে প্রেমের ধরন বদলে গেছেএখন প্রেম হয় মোবাইল ফোনেকথা হয় শেষ রাতে সংগুপনেমিলন হয় কলেজ হোষ্টেলে,ছাত্রাবাসে, রেষ্টুরেন্টে পার্ক কিংবা সিনামাহলেদামী উপহার, দামী খাবার, মোটা অংকের টাকা বা বিশেষ কোন সুবিধা আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ যুগের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের ইতিহাস একটা বিশ্বাস যা হৃদয়ে ধারন করবে,একটা স্বপ্ন যার আলোতে সারাটা জীবন পথ চলবে এমনটি বিনিময় করে এ যুগের রাধা–-কৃষ্ণ এদের সংখ্যা অতিব নগন্যযে প্রেমের সার্থক পরিনতি আছে তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা দুটি মানুষের এক নতুন জীবনের পথে একই সাথে পথচলাএ জীবনে অভিন্ন কোন স্বপ্ন নেই,অভিন্ন কোন চাওয়া নেই, অভিন্ন কোন স্বার্থ নেই স্বর্গের সুখ মর্তের শান্তি দুজনেরই সমান সমানপ্রেমের ব্যর্থ পরিনতির মধ্য দিয়ে মৃত্যু ঘটে একটি স্বপ্নেরমানুষের মৃত্যুর শোক সয়ে নেয়া যায় ভুলে থাকা যায় কিন্তু কোন স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটে এ শোক ভুলে থাকা যায় না, সারাটাজীবন এ মর্মন্তুদ ব্যদনার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়কখনোবা এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় চির অচেনা অন্য এক মানুষেরতখন কোন একজনের প্রিয় সঙ্গীত হয়-ভালোবাসা মোরে করেছে ভিখারি তোমকে করেছে রাণীবদলে যাওয়া এ মানুষগুলোর করুণ পরিনতির জন্য দায়ি কে? বাল্যপ্রেমের এমন পরিনতি আজকের সমাজে কোন বিরল ঘটনা নয়কারণ যে সম্পর্কের ভিত্তি কেবলই যৌনতা ও বস্তুুগত সার্থ সে সম্পর্ক বেশি দুর এগুতে পারে নাতবে বাল্যপ্রেম যদি বস্তুগত স্বার্থে উর্ধ্বে থেকে বিশ্বাসের আলোতে পথ চলে সফল পরিনতিতে যায় তখন শুরু হয় দাম্পত্য প্রেম, যেখানে কে আগে দেবে কে পরে দেবে, কে কম পেলো কে বেশি পেলো বস্তুগত বিষয়ে এমন প্রশ্ন ওঠে নাদুজনের বিশ্বাস রক্তকনায় মিশে গিয়ে যেন একাকার হয়ে যায় ভিন্ন আত্মা অভিন্ন বিশ্বাসে অভিন্ন কামনায় শুরু হয় মধুর জীবন যে জীবনে ঐর্শযের অভাব থাকলেও সুখের অভাব হয় নাযদি বিশ্বাসের কমতি থাকে লালসার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয় তবে শুরু হয় পরকীয়াপ্রেম শুরু হয় নদীর এক তীর ভেঙ্গে আরেক তীর গড়বার অবৈধ প্রেম লিলা যা কেবল ব্যক্তিজীবনকে অশানিÍর আগুনে পোড়িয়ে মারে না বরং গোটা সমাজকে কলঙ্কৃত করে প্রেম চিরন্তন প্রেম সার্বজনীন জলবায়ু ও ভৌগলিক অবস্থার পার্থক্যের কারণে এর প্রকাশ ও ধরন বৈচিত্রময়আমাদের এই ভূখ-ে ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনর ফলে মানুষের জীবন যাপনে যেমন পশ্চিমা ভাবধারার ছোঁয়া ল্য করা যায়, তেমনি ভালোবাসা নামের পবিত্র সম্পর্কের অন্তরালে এক শ্রেণীর অস মানুষের অনৈতিক কর্মকান্ড যা কেবল যৌনতা ও বস্তুগত লোভ লালসার কারণ, যার ফলে সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছেঅবাধ যৌনতা, বিবাহবিচেছদ, পরকিয়া প্রেম, তরুণ সমাজে মাদকের ভয়াবহ আসক্তি পারিবারিক কলহ, বিবাহবিচেছদ, সামাজিক অস্থিরতা মূল্যবোধের অবয় এর ক্ষতিকর প্রভাবে ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে


**** বৈষম্যমূলক অর্থব্যবস্থাকারনে
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দুর্ভোগ বাড়ছে
সাদেক আহমেদ যে জাতি লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ইংরেজদের এদেশের মাঠি থেকে বিতারিত করেছেমাতৃ ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাভাষাকে মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেদীর্ঘ্য নয় মাস যুদ্ধ করে ত্রিশলক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে এ দেশগঠিত হযেছে একটি সার্বভৌমরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশএ রাষ্ট্রের আছে একটি নির্দিস্ট সংবিধানএ সংবিধানে বলা আছে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো তার মৌলিক অধিকারনাগরিকের এ মৌলিক চাহিদাগৃলো পূরণ করা রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বআজ স্বাধিনতার ৪৬ বছর পরও এদেশের পথে-ঘাটে দেখা যায় আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু মানুষের ভির,খুদার্ত মানুষের মিছিলঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে খেলার মাঠে, পার্কে খোলা আকাশের নিচে মানুষকে রাত্রিযাপন করতে দেখা যায়এসকল মানুষের না আছে জীবনের নিরাপত্তা, না আছে খাদ্যের নিশ্চয়তা এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদেরঅথচ একই শহরে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা এমন বৃহ অট্টালিকা বানিয়ে রেখেছেন যাতে বসবাস করবার জন্য বিদেশি কুকুর আর পাহারাদার ব্যতিত কেও নেইযে কুকুরের প্রতি দিনের খাবারের প্রয়োজন ৫ থেকে ১০ কেজি মাংশঅথচ যে দরিদ্র লোকটি পাহারাদার সে তার পরিবার পরিজন নিয়ে মাসে একটি দিনও যদি মাংস দিয়ে পেট ভরে তৃপ্তিতে খেতে পারতো তবে সে শান্তি পেতোদুঃজনক হলেও সত্য যে অল্প বেতনের ছোট চাকুরে অথবা মধ্যবিত্ত পরিবরের লোকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগতই নাজুক অবস্থার দিকে অগ্রসরমানএর জন্য আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থা অনেকাংশেই দায়ি অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে যেভাবে পুজিবাদের উত্থান হয়েছিলো এদেশে অনুরূপভাবে সরকারি চাকুরিজীবীদের নিয়ে বর্তমানে বিশেষ এক শ্রেণী তৈরি হয়েছেযখন যে দলই সরকার গঠন করে সে দলই তাদের ক্ষমতাকে পাকা-পোক্ত করার জন্য এবং শাসনকালকে দীর্ঘায়ত করার জন্য সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকেপ্রজাতন্ত্রের এই বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার তখন নানা কৌশলে রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করেতেল,গ্যাস,বিদ্যু,পানির বিল ও নানা ধরনের সেবাখাতে টেক্স ও সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দেয়যার কারণে মানুষের জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে যায়বাজার অর্থনীতিতে সকল প্রকার পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়সরকারি চাকুরিজীবী পূর্বে যিনি ১০,০০০টাকা বেতন পেতেন বেতন বৃদ্ধির ফলে তিনি ২০,০০০টাকা পান,যারা রিক্সা চালান মজদুরি করেন এ ধরনের সেবাখাতের সাথে জড়িত তাদের আয় স্বভাবতই বৃদ্ধি পায়তারা বিদ্যমান বাজার অর্থনীতির সাথে মানিয় চলতে পারেনতবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এ অবস্থা যেন মরার উপর খাড়ার ঘামধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ রুচি ও ব্যক্তিত্বের কারণে রিক্সা চালানো,মজদুরি,ছোট ব্যবসা বা অন্যকোন ছোট খাটো সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে না পারার কারনে এদের জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়যেঠুকো সম্পদ ব্যবহার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো বছর বছর সে সম্পদ বিক্রি করে এক পর্যায়ে তারা নিঃশ হয়ে যায়তাদের শিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে যাদেরকে ভিটে-মাটি বিক্রি করে লেখা পড়া শিখিয়েছে তাদের ভাগ্যে চাকুরি জুটে নাকারণ ঘোষ দেওয়া ছাড়া এ দেশে চাকুরি পাওয়া কতটা কঠিন তা কেবল ভোক্তভোগীই জানে জলবায়ু ও ভৌগুলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ এ দেশের সামগ্রীক অর্থব্যবস্থা পূজিবাদি বান্ধব হওয়ায় শিক্ষিত, অল্পক্ষিত ও বিশেষ কোন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন লোক সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা ও অর্থসহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা নিজেদের উদ্যোগে কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে নাবাধ্য হয়ে তারা চাকুরির পেছনে ছুটাছোটি করেউপর মহলে যাদের মামা চাচা আছে যাদের টাকা পয়সা আছে তাদের হয়তো চাকুরি হয়উপর মহলে যাদের কেউ নেই লেখা পড়া করতে গিয়েই যাদের ভিটে-মাঠি বিক্রি করতে হয়েছে তারা চাকুরির পেছনে ছুটতে ছুটতে অবশেষে শিক্ষিত বেকারের কালিমা কপালে লাগিয়ে জীবন পার করতে হয় তাদেরস্বল্পল্প পূঁজির ছোট ব্যবসায়ি কিংবা গ্রামের সাধারণ কৃষক যখন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন গ্রহণ করে পরিশোধ করতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে তখন তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে বিচারের মুখোমুখি করা হয়অথচ শেয়ার মার্কেট, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে তাদের কিছুই হয় নাতাদের হাতে হাতকড়া পরাবার সাহস যেন কারো নেইবিসমিল্লাহ গ্রæ,হলমার্ক এরকম ভূইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় ঋন প্রদান করা হয় যে টাকা দেশের জনগনের কল্যাণে কোন উপাদনশীল কাজে খরচ হয় নাএ টাকা বিদেশে পাচার করে নিরাপদে জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি করে যারা তারা দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আলিশান বাড়িতে রাজকীয় জীবন যাপন করেবৈষম্যের কারণে নিষ্পেষিত যারা সাদেক আহমেদ যে জাতি লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ইংরেজদের এদেশের মাঠি থেকে বিতারিত করেছেমাতৃ ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাভাষাকে মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেদীর্ঘ্য নয় মাস যুদ্ধ করে ত্রিশলক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে এ দেশগঠিত হযেছে একটি সার্বভৌমরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশএ রাষ্ট্রের আছে একটি নির্দিস্ট সংবিধানএ সংবিধানে বলা আছে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো তার মৌলিক অধিকারনাগরিকের এ মৌলিক চাহিদাগৃলো পূরণ করা রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বআজ স্বাধিনতার ৪৬ বছর পরও এদেশের পথে-ঘাটে দেখা যায় আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু মানুষের ভির,খুদার্ত মানুষের মিছিলঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে খেলার মাঠে, পার্কে খোলা আকাশের নিচে মানুষকে রাত্রিযাপন করতে দেখা যায়এসকল মানুষের না আছে জীবনের নিরাপত্তা, না আছে খাদ্যের নিশ্চয়তা এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদেরঅথচ একই শহরে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা এমন বৃহ অট্টালিকা বানিয়ে রেখেছেন যাতে বসবাস করবার জন্য বিদেশি কুকুর আর পাহারাদার ব্যতিত কেও নেইযে কুকুরের প্রতি দিনের খাবারের প্রয়োজন ৫ থেকে ১০ কেজি মাংশঅথচ যে দরিদ্র লোকটি পাহারাদার সে তার পরিবার পরিজন নিয়ে মাসে একটি দিনও যদি মাংস দিয়ে পেট ভরে তৃপ্তিতে খেতে পারতো তবে সে শান্তি পেতোদুঃজনক হলেও সত্য যে অল্প বেতনের ছোট চাকুরে অথবা মধ্যবিত্ত পরিবরের লোকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগতই নাজুক অবস্থার দিকে অগ্রসরমানএর জন্য আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থা অনেকাংশেই দায়ি অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে যেভাবে পুজিবাদের উত্থান হয়েছিলো এদেশে অনুরূপভাবে সরকারি চাকুরিজীবীদের নিয়ে বর্তমানে বিশেষ এক শ্রেণী তৈরি হয়েছেযখন যে দলই সরকার গঠন করে সে দলই তাদের ক্ষমতাকে পাকা-পোক্ত করার জন্য এবং শাসনকালকে দীর্ঘায়ত করার জন্য সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকেপ্রজাতন্ত্রের এই বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার তখন নানা কৌশলে রাজ¯^ বৃদ্ধির চেষ্টা করেতেল,গ্যাস,বিদ্যু,পানির বিল ও নানা ধরনের সেবাখাতে টেক্স ও সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দেয়যার কারণে মানুষের জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে যায়বাজার অর্থনীতিতে সকল প্রকার পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়সরকারি চাকুরিজীবী পূর্বে যিনি ১০,০০০টাকা বেতন পেতেন বেতন বৃদ্ধির ফলে তিনি ২০,০০০টাকা পান,যারা রিক্সা চালান মজদুরি করেন এ ধরনের সেবাখাতের সাথে জড়িত তাদের আয় স্বভাবতই বৃদ্ধি পায়তারা বিদ্যমান বাজার অর্থনীতির সাথে মানিয় চলতে পারেনতবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এ অবস্থা যেন মরার উপর খাড়ার ঘামধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ রুচি ও ব্যক্তিত্বের কারণে রিক্সা চালানো,মজদুরি,ছোট ব্যবসা বা অন্যকোন ছোট খাটো সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে না পারার কারনে এদের জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়যেঠুকো সম্পদ ব্যবহার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো বছর বছর সে সম্পদ বিক্রি করে এক পর্যায়ে তারা নিঃশ হয়ে যায়তাদের শিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে যাদেরকে ভিটে-মাটি বিক্রি করে লেখা পড়া শিখিয়েছে তাদের ভাগ্যে চাকুরি জুটে নাকারণ ঘোষ দেওয়া ছাড়া এ দেশে চাকুরি পাওয়া কতটা কঠিন তা কেবল ভোক্তভোগীই জানে জলবায়ু ও ভৌগুলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ এ দেশের সামগ্রীক অর্থব্যবস্থা পূজিবাদি বান্ধব হওয়ায় শিক্ষিত, অল্পক্ষিত ও বিশেষ কোন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন লোক সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা ও অর্থসহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা নিজেদের উদ্যোগে কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে নাবাধ্য হয়ে তারা চাকুরির পেছনে ছুটাছোটি করেউপর মহলে যাদের মামা চাচা আছে যাদের টাকা পয়সা আছে তাদের হয়তো চাকুরি হয়উপর মহলে যাদের কেউ নেই লেখা পড়া করতে গিয়েই যাদের ভিটে-মাঠি বিক্রি করতে হয়েছে তারা চাকুরির পেছনে ছুটতে ছুটতে অবশেষে শিক্ষিত বেকারের কালিমা কপালে লাগিয়ে জীবন পার করতে হয় তাদেরস্বল্পল্প পূঁজির ছোট ব্যবসায়ি কিংবা গ্রামের সাধারণ কৃষক যখন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন গ্রহণ করে পরিশোধ করতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে তখন তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে বিচারের মুখোমুখি করা হয়অথচ শেয়ার মার্কেট, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে তাদের কিছুই হয় নাতাদের হাতে হাতকড়া পরাবার সাহস যেন কারো নেইবিসমিল্লাহ গ্রুপ,হলমার্ক এরকম ভূইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় ঋন প্রদান করা হয় যে টাকা দেশের জনগনের কল্যাণে কোন উপাদনশীল কাজে খরচ হয় নাএ টাকা বিদেশে পাচার করে নিরাপদে জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি করে যারা তারা দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আলিশান বাড়িতে রাজকীয় জীবন যাপন করে
***সাংস্কৃতিক সংকট, সাদেক আহমেদ
সৃষ্টির সেরা মানবজাতিমানুষের আছে অন্যের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আশা-হাতাশা ও ভালো-মন্দ বুঝবার অসীম ক্ষমতা এবং প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও সে সক্ষমবাঁচার তাগিদে মানুষকে কত কিযে করতে হয়, তার কোন নিদিষ্ট পরিসংখ্যান নেইব্যাক্তি পর্যায় থেকে সমষ্টিগত পর্যায়ে কর্মকা- ও জীবনধারায় দেখা যায় বিচিত্র রূপএরই মাঝে গড়ে উঠে মানুষের সংস্কৃতিপ্রকৃতির বিধান মেনে নারী- পুরুষের বিবাহবন্ধন, সন্তানজন্মদান, তাকে লালন-পালন ইত্যাদি নানা কারনে গড়ে উঠে পরিবার ও সমাজসে সমাজে প্রতিটি মানুষকে নানাবিধ নিয়ম-নীতি, শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্য দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেবিস্তার লাভ করে তার সংস্কৃতিরপ্রতিটি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে শান্তির দীপ জ্বালিয়ে ক্রমাগত আলোর পথে এগিয়ে চলেনিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি তাদের মনের গভীরে জন্ম নেয় ভালোবাসামানব সভ্যতার ঊষালগ্নে পশুশিকার, পাথর দিয়ে অস্ত্র তৈরি ও গাছের পাতা দিয়ে মানুষ নিজের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতোপরবর্তী সময়ে মানুষ বস্ত্র বানাতে শেখে, জীবিকার জন্য সে আয়ত্ত করে নানাবিধ কৌশল, পাদন করতে শেখে রকমারি ফসলফলে উন্নত হয় জীবনমানসংস্কৃতির বিকাশের ফলে মানুষ গান গাইতে শেখে, বিস্তার লাভ করে নৃত্য, চিত্রকলা ও সাহিত্যআমাদের এই ভূখ-ে বহুজাতি, সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষ সুদীর্ঘ সময় যাবত বসবাস করে আসছেপ্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারীহাজার বছর ধরে প্রত্যেক জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতি এ অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ুতে স্বাধীনভাবে চর্চা করে আসছেনিজস্ব সংস্কৃতি,ঐতিহ্য, লোকাচার ও রীতি-নীতি তারা বংশ পরম্পরায় মেনে আসছেনিজেদের সংস্কৃতির মাঝে তারা খোঁেজ পেয়েছে শান্তি ও স্বস্তিশান্তির অন্বেষায় ঐক্য, সাম্য ও ভ্রাতৃত্তের বন্ধন হয় আরো সুদৃঢ়আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে রয়েছে নানাবিধ গান, কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটক , উপন্যাস ও প্রবন্ধনিজেদের সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায় এসবের মধ্যে দিয়েঅতীত ও বর্তমানের মাঝে তৈরি হয় সেতুবন্ধনতাই মানবতাবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বোদ্ধ জাতি গঠনে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেইএকই ভূখন্ডে বসবাসকারী ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মেলামেশা, উঠাবসা ও যোগাযোগের ফলে সংস্কৃতির মিশ্রণভাব লক্ষ করা যায়কোন নির্দিষ্ট জাতির নিজস্ব সংস্কৃতিতে ভিন্নদেশী সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সে জাতির সংস্কৃতিনিজন্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক যে জনগোষ্ঠী তাদের চিস্তা-চেতনা ও রুচিবোধের পরিবর্তন দেখা যায়ফলে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়সমাজে বৃদ্ধি পায় অস্থিরতা, অশাস্তি ও হতাশা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা মানুষটির মাঝেও সেটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, পোষাক-পরিচ্ছদ ও চলনবলন দেখবার সুযোগে তাদের চিন্তা-চেতনা ও মনোভাবের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নৈতিক উদারতার নামে মুক্তবাজার অর্থনীতির ন্যায় অবাধে চলে বিদেশি সংস্কৃতির বাণিজ্যডিজে পার্টি,সাম্বানৃত্য ও কাপলডান্স পশ্চিমা সমাজের সংস্কৃতি হতে পারে কর্মক্লান্ত নাগরীক জীবনে দেহের ক্লান্তি দুর করবার জন্য নেশাজাতীয় পাণীয় পান করে নারী-পরুষ নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে নৃত্য করা, গাড়ীর চাবি বদলের মধ্য দিয়ে স্ত্রী বদল করা পশ্চিমাদের সংস্কৃতি হতে পারে, কখনো তা বাঙালির সংস্কৃতি হতে পারে নাবাঙালি নারী তার সম্ভ্রমকে সতিত¦ হিসাবে জানেসমাজ রাষ্ট্র ও ধর্মমতে যাকে সে স্বামী হিসেবে জানে তাকেই কেবল সে তার রূপ-যৌবন ও সম্ভ্রমের অংশীধার হিসাবে জানে ও সর্বান্তকরনে মানেশত প্রয়োজন ও সংকটেও কোন বাঙালি নারী একমুহূর্তের জন্যেও অন্য কোন পরুষকে তার শয্যাসঙ্গী মেনে নিতে পারে নাচরম প্রতিকুলতায়ও অসংখ্য বাঙালি নারী জীবন দিয়ে তার প্রমাণ দেখিয়ে গেছে মধ্যপাণ ও যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন করে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন অবস্থা চাইনিস রেষ্টুরেণ্টে নাচ-গান করে বিনোদন করা অন্য কোন দেশের সংস্কৃতি হতে পারে, কখনো তা বাঙালির সংস্কৃতি হতে পারে নাএদেশের যুব সমাজ সুদুর অতীতকাল থেকে যাত্রাপালা, পালাগান, কবিগান ও সার্কাসসহ অনেক শুদ্ধ সংস্কৃতির অনুষঙ্গ চর্চা করে এসেছে, যে গুলো বাঙালি সংস্কৃতির ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে এবং নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন ও জাতীয়তাবোধ সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছেবৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা হবেন প্রবীন নিবাসের বাসিন্দা পশ্চিমা বিশ্বে এ সংস্কৃতি প্রশংসীত হলেও হতে পারে তবে বাঙালি সমাজে এ নিয়ম কখনো প্রশংসার যোগ্য নয়বাঙালি পরিবারের শিশুরা জন্মের পর থেকে শৈশব ও কৈশোর কাটে বৃদ্ধ দাদা-দাদির ঘনিষ্ঠতা ও অত্যান্ত মায়া-মমতার ছায়ায়বৃদ্ধ বয়সের এই প্রাজ্ঞ লোকদের আচার-আচারণ দেখে শিশুর মন ও মানুষিকতায় সৃষ্টি হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মানবিকমূল্যবোধবিশ্ব জুড়ে আমাদের জাতি সত্তার যেমন গৌরবোজ্জল পরিচিতি আছে তেমনই আছে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাসবর্তমানে সাংস্কৃতির যে সুনামী চলছে আমাদের দেশে, তাতে গা না ভাসিয়ে আমাদের ভাবতে হবে কোন ধরনের সংস্কৃতি আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার জন্য মানানসইপোষাক-পরিচ্ছদে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, বিনোদের নামে পতিতাবৃত্তি ও অবাধ যৌনতাকে কখনো সংস্কৃতি বলা যায় না এ দেশরে মানুষের সংস্কৃতিতে ছিল মানবতাবোধ,শালীনতাবোধ,কৃষ্ট নৈতিকতাবোধ তবে কালক্রমে সবেই যেন আজ বিলীনের পথে
****জীবন নদীর বাঁকে সাদেক আহমেদ
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কে জীবন বলেশৈশব, কৈশোর ও যৌবন জীবনের এরূপ প্রতিটি বাঁকে বাঁকে এমন কিছু স্মৃতি থাকে, যা ভুলতে চাইলেও ভুলা যায় নাসূর্য পূর্ব দিকে ওঠেএ সত্য যদি কেউ স্বীকার নাও করে তাতে যেমন কিছুই যায় আসে নাতেমনি জীবনের পাতায় অম্ল-মধুর বাস্তবতায় যে সত্য আঁচড় দিয়ে যায় তা যেন স্মৃতিতে অম্লান অক্ষয় হয়ে থাকে সারাজীবনসবুজ স্মৃতির বোঝা বয়ে চলা এমনই এক তরুণসে কখনো দুঃখের কাছে, কষ্টের কাছে হার মানেনিতার নিকট আত্মীয়ের একমাত্র মেয়ে নীল নবম শ্রেণীর ছাত্রীনীলার দেহের গঠন, গায়ের রঙ কোনটাই সবুজের কাছে লোভনীয় ছিল নাতবুও নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে সবুজ যে সত্য আবিষ্কার করেছিল তা হলো নীলার বুদ্ধিদীপ্ত সারল্যবোধ ও মেধাতাদের পারস্পরিক আস্থা ও নির্ভরশীলতা ক্রমাগত বাড়তে থাকেনীলার মা মমতা বেগম মধ্যবিত্ত পরিবারের চাকুরিজীবী মহিলাতার একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য তিনি সবই করতে প্রস্তুত এরই মাঝে কোন এক অশুভ লগ্নে সবুজের মা মারা যায়বাবার দ্বিতীয় বিয়ে সবুজ মেনে নিতে পারেনিস্বপ্নবিলাসী মেধাবী তরুণ মনের আকুতি তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন কেউ বুঝতে চায়নি সেদিনজীবনের পথে সাফল্যের যে স্বপ্ন সবুজ লালন করেছিলো শৈশবকাল থেকে তা যেন ধূলোয় মিশে যেতে বসেছেজীবনে নেমে আসে দুর্বিসহ দুঃখ-কষ্টপ্রতিটি মুহূর্ত কাটে প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতেসদ্য গ্র্যাজুয়েশন করা যুবক যার চোখে মুখে অসাধ্য সাধনের তীব্র আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি কেউ না দেখতে পেলেও দেখেছিল নীলা, বুঝতে পেরেছিল নীলার মা মমতা বেগমতাই হয়তো সবুজের এই কঠিন সময়ে নীলার মা সবুজের প্রতি মাতৃত্বের মমতাকে অবারিত করে দিয়েছিলো সেদিনমাস যায় বছর যায় চোখের ভূমিতে লালন করা স্বপ্নগুলো জয় করে নীলার হাতে তুলে দিবে সাফল্যের চাবি, এমনই দীপ্ত কঠিন শপথ আর ছোট ছোট সাফল্যের প্রেরণায় সবুজ জীবনের পথে এগিয়ে চলে প্রতিটি সংকটে সংশয়ে কল্পনা করে নীলা তার পাশে, নীলার মায়ের আশীর্বাদ সবুজকে যেন আলোর পথে হাতছানি দিয়ে ডাকছেদুঃখ কষ্ট অক্টোপাশের মতো ঘিরে থাকা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যাকে কল্পনা করেছে সবুজ, সময় পেলেই একটিবার দেখার জন্য পাগলের মতো ছুটে গিয়েছে তার কাছেজীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে দুজনেই প্রাণ খুলে হেসেছে মুখোমুখি দাঁড়িয়েযে কথা যায় না বলা মুখে, সে কথা চোখের ভাষায় বলবার চেষ্টা করেছে দুজন দুজনকেনীলাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে স্বপ্নের মতো সফল নীলাকে বসিয়ে রেখেছে হৃদয় মসনদেএরই মাঝে কেটে যায় সাতটি বছরনানাবিধ বাঁধার বৃন্দাচল পেরিয়ে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সবুজ এখন স্বাবলম্বীএখন সে পরিচিতজনের কারো কাছে স্নেহের, কারো কাছে শ্রদ্ধেয়, কারো কাছে কল্পনার যুবরাজকিন্তু সবুজের হৃদয় রাজ্য যে নীলাকে লিখে দিয়েছে অনেক দিন আগেই, সে কথা কাউকে বলেনি কোন দিনবিষয়টি অসময়ে যদি জানাজানি হয়, তবে হয়তো নীলার সামনে এগিয়ে যাবার পথ বাঁধাগ্রস্ত হবেএখন নীলা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করা বাইশ বছর বয়সী কর্মক্ষম নারীসময় যেন এসে গেছে দুঃখের কথা ভুলে এবার সুখের গান শোনাবারকল্পলোকে যে বাসর সাজিয়েছে এতটা দিন তার দ্বার খোলবারকোন এক বিকেলে সবুজ ফোন করে নীলাকেনীলাকে শুনবে সবুজ, বলবে নিজের কথাযে কথার মালা সাজিয়েছে সাতটি বছরসে মালা নিজের হাতে পরাবে নীলাকেসবুজ এখন জানে না নীলা আজ আর সে নীলা নেইএখন যেন সে ভাগ্যবদলের নীলা পাথরযা সবার জীবনে সয় নাএখন সে অচেনা মানুষের মতো নিজের স্বার্থকে আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন দেখতে শিখেছেভুলে গেছে অতীতের সকল স্মৃতি .................
***বাংলা ভাষার উপত্তি ও ক্রমবিকাশ সাদেক আহমেদ
প্রাচীনকালে যখন পৃথিবীতে ভাষার প্রচলন ছিলো না, তখন মানুষ তার নিজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রয়োজন-প্রত্যাশা ইত্যাদি মনের ভাব প্রকাশ করতো ইশারায়, ইঙ্গিতে ও দেহ ভঙ্গির মাধ্যমেকখনো কখনো মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ছবি এঁকে মনের ভাব একজন অপরজনকে জানাবার চেষ্টা করতোকালের বিবর্তনে ও মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন অঞ্চলের জনবসতির মাঝে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার উদ্ভব ঘটেআমাদের এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলাবাংলা ভাষার শব্দ ভা-ারে অষ্ট্রিক, দ্রাবির, গ্রীক, পার্সি, সংস্কৃত, আর্য, পলি, মাগধি-প্রাকৃত ও ফিনিসীয় ভাষাসহ আরো অনেক জাতিগোষ্ঠীর শব্দ লক্ষ করা যায়ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে- অস্ট্রিক ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় দ্রাবিড় ভাষাসহ আরও অনেক ভাষার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়যেমন কুটির, কুটুম্ব, নীর, মীন, কানা, মাদুর, ছোলা ইত্যাদিবৃহত্তর বাংলার অনেক স্থানে নামের শেষে গুড়ি (জলপাইগুড়ি), জুলি (নয়নজুলি), ভিটা, কুটি ইত্যাদি শব্দ যুক্ত থাকেএগুলো দ্রাবিড় ভাষার ঐতিহ্য বলে চিহ্নিতআসলে যখন বাংলায় অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষার ব্যবহার চলছিল, তখনও এ দেশের ভাষাকে বাংলা ভাষা বলে চিহ্নিত করার উপায় ছিল না কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভাষা রূপান্তরে এসব ভাষার অনেক বাংলা ভাষায় যুক্ত হতে থাকে শব্দ যুক্ত হতে থাকেশুধু আদি দেশীয় ধারা কেন, যুগে যুগে এ মাটিতে নানা বিদেশীর আগমন ঘটেছেতারাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে নিজেদের ভাষাবাংলা ভাষার গঠন পর্বে যে খোলা জানালা ছিল, তা দিয়ে অনায়াসে ঢুকে পড়েছে অনেক বিদেশী শব্দএভাবে শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে এ ভাষারযেমন গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের সঙ্গে অনেক গ্রিক প্রবেশ করেছিল উপমহাদেশেভারতের কোথাও কোথাও তারা বসতিও গেড়েছিলতাই গ্রিক শব্দ আত্তীকরণ করতে আমাদের অসুবিধা হয়নিগ্রিক মুদ্রার নাম ছিল ‘দ্রাখমে’তা থেকে ‘দ্রাক্ষ’ এবং পরে তা ‘দাম’ (মূল্য) শব্দে রূপান্তরিত হয়ে জায়গা করে নেয় বাংলা ভাষায়পারসিক ভাষায় লম্বা বুট জুতাকে বলা হতো ‘মোচক’পরে বাংলায় চর্মকার হিসেবে ‘মুচি’ শব্দটি প্রতিষ্ঠা পায়লেখার জন্য তৈরি চামড়াকে পারসিক ভাষায় বলা হতো ‘পোস্ত’তা থেকে সংস্কৃত শব্দ আসে ‘পুস্তক’বাংলায় আমরা বলি পুঁথিপারস্য প্রভাব বাংলায় মধ্যযুগে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলতাই এদেশের ভাষায় পারসীয় প্রভাবিত শব্দের অন্ত নেইপ-িতদের বিচারে প্রায় আড়াই হাজার ফারসি শব্দ চালু আছে বাংলা ভাষায় ভাষা রূপান্তরের সবচেয়ে প্রবল ধারা তৈরি হয়েছিল আর্য প্রভাবের মধ্য দিয়ে আর্য আগমনের পর থেকে এ দেশে সবল আর্য ভাষার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েসংস্কৃত ভাষা সর্বসাধারণের ভাষায় পরিণত হওয়ায় সমস্যা ছিলকারণ প্রতিদিনের কাজে মানুষ সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করতে পারত নাআদি যে বৈদিক ভাষা ছিল, যা আর্যদের সৃষ্টি, তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ব্যাকরণবিদরা এই সংস্কৃত ভাষা সৃষ্টি করেন উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চা ও ধর্মীয় সাহিত্য রচনা করাএ কারণে সংস্কৃত ভাষা উচ্চ শ্রেণীর সামান্যসংখ্যক শিক্ষিত মানুষের বাইরে প্রচলিত হতে পারেনিআর্য ধর্মগ্রন্থ’গুলো- যেগুলো ‘সংহিতা’ নামে পরিচিত- তা সংস্কৃত ভাষার নয়সে যুগের মানুষের মুখের ভাষার সঙ্গে সংহিতার ভাষার অনেকটা মিল ছিলবৈদিক যুগের প্রথম দিকে না হলেও অর্থা ঋগবৈদিক যুগের পরবর্তীকালে আর্যরা তাদের ভাষা নিয়ে উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়েসাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশ্রণে বেদের ভাষা ক্রমে সরল হতে থাকেকোনো কোনো স্থানীয় কথ্য ভাষাও যুক্ত হয় ধর্মগন্থ’গুলোতেআর্যভাষা যত পূর্বদিকে অর্থা আমাদের এ অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, ততই এতে মিশ্রণ বাড়েএই মিশ্রণে দেশের কোল-দ্রাবিড় ভাষার সঙ্গে ক্রমে বৃদ্ধি পায়পূর্বাঞ্চলে অনার্যদের প্রবল অবস্থান থাকায় অনার্যরাই আর্যভাষা প্রচার করতে থাকেএভাবে পূর্বাঞ্চলে আর্য ভাষায় ভাঙন ধরেএমনি করে আর্যভাষা ভেঙেচুরে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা তৈরি হয়যার নাম হয় ‘প্রাকৃত’নামেই বোঝা যায় ‘প্রাকৃত’ সাধারণ মানুষের ভাষাকারণ সাধারণ মানুষকেও বলা হতো ‘প্রাকৃতজন’খুব ধীরগতিতে যুগ যুগ ধরে আর্যভাষা থেকে ‘প্রাচীন প্রাকৃতের’ আবির্ভাব হয়গৌতম বুদ্ধের যুগে এই পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোও প্রাকৃত ভাষায় লিখিত হতে থাকেএকটু পরিশীলিতভাবে লিখিত হওয়ায় ধর্মগ্রন্থের এ ভাষা নাম নেয় ‘পালি’পরিবর্তনের পথ মাড়িয়ে বাংলা ভাষা এক সময় তার নিজস্ব অবয়বে এসে দাঁড়ায়বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে ‘চর্যাপদ’ নামের পুঁথিকে নির্দেশ করা হয়এই অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে পাল শাসন যুগেপ-িত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল রাজদরবারে সংস্কৃত পুঁথি খুঁজতে গিয়ে এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করেন ২২ জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যের ৪৭টি চর্যাপদ ও তার সঙ্গে আরও তিনটি পুঁথি পেয়েছেন তিনিএসব থেকে অনুমান করা হয় ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে চর্যাপদ লেখা শুরু হয়েছিলআদি মধ্যযুগের বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন হচ্ছে বড়– চ-ীদাসের লেখা কাব্য ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’আর শেষ মধ্য পর্যায়ের নিদর্শনগুলো হচ্ছে কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’, কবি কঙ্কনের ‘চ-ীমঙ্গল’, কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্যচরিতামৃত’, কবিচন্দ্রের ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’, ঘনরাম চক্রবর্তীর ‘ধর্মমঙ্গল’, ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ ইত্যাদি গ্রন্থ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাংলা ভাষার আধুনিক রূপ নির্দিষ্ট হয়েছেবাংলা ভাষার বিবর্তনের এই ধারাকে আমরা ব্যাকরণের দৃষ্টিতেও দেখতে পারিআগেই দেখা গেছে বাংলা ভাষার ভিত্তি অস্ট্রিক, দ্রাবিড় আর সবশেষে মাগধী-প্রাকৃতএই তিন ভাষার শব্দগুলোই ‘দেশী’ বা ‘দেশজ’ শব্দ হিসেবে পরিচিতএসব ভাষার অবস্থান থাকলেও বাংলা ভাষার উদ্ভবে সংস্কৃত ভাষার বিশেষ ভূমিকা ছিলকিন্তু সংস্কৃতের সঙ্গে উচ্চারণগত অনেক প্রভেদ রয়েছেউচ্চারণের প্রভেদ ছাড়াও বাংলায় মাত্র দুটি লিঙ্গ ব্যবহৃত হয় সংস্কৃতে ক্লীবলিঙ্গও আছেবাংলায় বিশেষণ ব্যবহারে কারক বিভক্তি যুক্ত হয় না, সংস্কৃতে হয়এসব ছাড়াও আরও ছোটখাটো প্রভেদ আছেআবার বিবর্তনের ধারায় আদি ও মধ্যযুগের বাংলার সঙ্গে আধুনিক বাংলারও বেশকিছু প্রভেদ লক্ষ করা যায় ভাষাকে ভবিষ্যতের জন্য ধারণ করা হয় তার লিখিত রূপের মধ্য দিয়েআর প্রয়োজনেই উদ্ভাবিত হয় লিপিউপমহাদেশের প্রাচীনতম লিপির নিদর্শন সম্রাট অশোকের লিপি- যা ‘অশোকের অনুশাসন’ নামে পরিচিতলিপিগুলো খোদিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকেবাংলাদেশে প্রাচীনতম লিপি নিদর্শন মহাস্থানগড়ে পাওয়া অশোকের লিপিএই লিপির নাম ‘ব্রাহ্মী’ব্রাহ্মী ভারতের অন্যতম প্রাচীন লিপিকারও মতে, ব্রাহ্মী লিপির আদি উস সুদূর ফিনিশিয়ায়ফিনিশীয় বর্ণমালার ওপর ভিত্তি করেই ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব বলে মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো প-িতকিন্তু দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অন্যরাতাদের মতে, সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে পাওয়া শিলালিপি পাওয়া গেছেএসব লিপির বিবর্তিত রূপ হচ্ছে এই ব্রাহ্মী লিপিকুষাণ ও গুপ্ত রাজাদের আমলে ব্রাহ্মী লিপি পরিবর্তিত হতে থাকেএভাবে সাত শতকে ব্রাহ্মী লিপি তিনটি বিশিষ্ট রূপ ধারণ করেএর মধ্যে কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে প্রচলিত রূপটির নাম ‘সারদা’রাজস্থান, মালয়, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের প্রচলিত রূপটির নাম ‘নাগর’, আর আমাদের পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত রূপটির নাম ‘কুটিল’‘কুটিল’ রূপটি থেকেই বাংলা লিপির উদ্ভব‘নাগর’ রূপ থেকে দাঁড়িয়েছে দেবনাগরী লিপিএভাবে প্রায় হাজার বছর আগে বাংলা ও দেবনাগরী লিপির উদ্ভব ঘটে
লিপি ভাষার লিখিত রূপদানের মাধ্যম হলেও বাংলা লিপিকে আশ্রয় করেই বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটেছেবাংলা লিপির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই লিপি শুধু বাংলা ভাষা প্রকাশেরই বাহনতাই বিবর্তনের পথ মাড়ালেও বাংলা ভাষা ও বাংলা লিপির অবস্থান অভিন্ন মেরুতে রয়ে গেছে এভাবেই বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়সেজন্য বাংলা ভাষাকে বলা হয় শংকর ভাষা ১৮শ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষর ভিতর দিয়ে বাংলা ভাষা আজকের এইরূপে এসে দাঁড়িয়েছেকোন একটি নির্দিষ্ট ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেনিআজ বাংলা ভাষা কেবল দুই বাংলার নয় সমগ্র বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টি হলেও পূর্বপাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নিপাকস্তানীরা আমাদেরকে মর্যাদা দিতে চায়নিতারা চেয়েছিল আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে১৯৪৮ সালে পকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করেনছাত্ররা তাক্ষণিক এর প্রতিবাদে ফেটে পড়েএ প্রতিবাদ আন্দোলনের ধারাবহিকতা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সমগ্র বাংলাদেশে ধর্মঘট ডাকা হয়সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল, মিটিং, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেয়পাকিস্তানি সেনারা প্রতিবাদী ছাত্রদের মিছিলে গুলি করে কেড়ে নেয় সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অনেকের জীবনতাদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হল মাতৃভাষার মর্যাদাএকুশের বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি রোপণ করল স্বাধীনতার রক্তিম বীজআর সে বীজ থেকে স্বাধীনতার ফসল তোলা হল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরসুতরাং একুশ ও স্বাধীনতা এক সূত্রে গাঁথা কানাডায় বাঙালি যুবক রফিকুল ইসলাম ও আবদদুস সালাম সর্বপ্রথম ‘গড়ঃযব ষধহমঁধমব ড়ভ ঃযব ড়িষফ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি এ সংগঠনের পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠায় তারাকফি আনান তাদের ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেনকফি আনানের পরামর্শ ‘গড়ঃযব ষধহমঁধমব ড়ভ ঃযব ড়িষফ’ নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেএবার তারা ৭টি ভিন্ন ভাষার ১০ জনের স্বাক্ষরসহ ইউনেস্কোর কাছে আরেকটি আবেদনপত্র পাঠান ইউনেস্কোর শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মিসেস আনান মারিয়া এই আবেদনের জবাবে জানান, কোনো বেসরকারি সংগঠনের প্রস্তাব ইউনেস্কো বিবেচনা করতে পারে নাতবে কোনো দেশের সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয় তখন প্রাস্তাবটি বিবেচনা করা যেতে পারেএর পর রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করেনকালীন শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীকে জানানপ্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবসহ শিক্ষামন্ত্রীকে প্যারিসে পৌঁছানোর নির্দেশ প্রদান করেনঅবশেষে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের প্রস্তাবটি ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ ইং তারিখে ইউনেস্কোর দপ্তরে পেশ করেনপ্রাথমিকভাবে ২৭টি দেশ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে সমর্থন করে২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদে আলোচিত হয়অবশেষে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়
প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয় বিশ্বের ১৮৮ টি দেশের মানুষ মে দিবসের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে মাতৃভাষার জন্য বাঙ্গালীর আত্মবলিদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়


নষ্টা
...........
সাদেক আহমেদ
***********
তোর মনে প্রেম ছিলো না
শুধু ছিলো পাপ
এই জীবনে পরজীবনে
পাবে না তুই মাফ
পাপের বোঝা কেবলই তোর
বাড়ছে পাহাড় সমান
দেহ বেচে বেঁচে আছিস
এটই তার প্রমাণ
টাকাওয়ালা লোক  দেখে
ছুটিস তার পিছু
তুই যে নারী সতীত্ব তোর
ভুলে যাস সবকিছু
দেহব্যবসা করে কারও
যায় না চিরকাল
ঘরে-বাইরে সবখানেতেই
হয় সে নাজেহাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন