সাদেক আহমেদ
যে জাতি লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ইংরেজদের এদেশের মাঠি থেকে বিতারিত করেছে। মাতৃ ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাভাষাকে মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছে।দীর্ঘ্য নয় মাস যুদ্ধ করে ত্রিশলক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে ¯^াধীন হয়েছে এ দেশ।গঠিত হযেছে একটি সার্বভৌমরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ। এ রাষ্ট্রের আছে একটি নির্দিস্ট সংবিধান। এ সংবিধানে বলা আছে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো তার মৌলিক অধিকার। নাগরিকের এ মৌলিক চাহিদাগৃলো পূরণ করা রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব। আজ ¯^াধিনতার ৪৬ বছর পরও এদেশের পথে-ঘাটে দেখা যায় আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু মানুষের ভির,খুদার্ত মানুষের মিছিল। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে খেলার মাঠে, পার্কে খোলা আকাশের নিচে মানুষকে রাত্রিযাপন করতে দেখা যায়। এসকল মানুষের না আছে জীবনের নিরাপত্তা, না আছে খাদ্যের নিশ্চয়তা এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। অথচ একই শহরে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা এমন বৃহৎ অট্টালিকা বানিয়ে রেখেছেন যাতে বসবাস করবার জন্য বিদেশি কুকুর আর পাহারাদার ব্যতিত কেও নেই। যে কুকুরের প্রতি দিনের খাবারের প্রয়োজন ৫ থেকে ১০ কেজি মাংশ। অথচ যে দরিদ্র লোকটি পাহারাদার সে তার পরিবার পরিজন নিয়ে মাসে একটি দিনও যদি মাংস দিয়ে পেট ভরে তৃপ্তিতে খেতে পারতো তবে সে শান্তি পেতো। দুঃজনক হলেও সত্য যে অল্প বেতনের ছোট চাকুরে অথবা মধ্যবিত্ত পরিবরের লোকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগতই নাজুক অবস্থার দিকে অগ্রসরমান। এর জন্য আমাদের
দেশের অর্থব্যবস্থা অনেকাংশেই দায়ি। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে যেভাবে পুজিবাদের উত্থান হয়েছিলো এদেশে অনুরূপভাবে সরকারি চাকুরিজীবীদের নিয়ে বর্তমানে বিশেষ এক শ্রেণী তৈরি হয়েছে। যখন যে দলই সরকার গঠন করে সে দলই তাদের ক্ষমতাকে পাকা-পোক্ত করার জন্য এবং শাসনকালকে দীর্ঘায়ত করার জন্য সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে।প্রজাতন্ত্রের এই বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার তখন নানা কৌশলে রাজ¯^ বৃদ্ধির চেষ্টা করে।তেল,গ্যাস,বিদ্যুৎ,পানির বিল ও নানা ধরনের সেবাখাতে টেক্স ও সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে মানুষের জীবন যাপনের ব্যয় বেড়ে যায়।বাজার অর্থনীতিতে সকল প্রকার পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়।সরকারি চাকুরিজীবী পূর্বে যিনি ১০,০০০টাকা বেতন পেতেন বেতন বৃদ্ধির ফলে তিনি ২০,০০০টাকা পান,যারা রিক্সা চালান মজদুরি করেন এ ধরনের সেবাখাতের সাথে জড়িত তাদের আয় ¯^ভাবতই বৃদ্ধি পায়। তারা বিদ্যমান বাজার অর্থনীতির সাথে মানিয় চলতে পারেন।তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এ অবস্থা যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ রুচি ও ব্যক্তিত্বের কারণে রিক্সা চালানো,মজদুরি,ছোট ব্যবসা বা অন্যকোন ছোট –খাটো সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে না পারার কারনে এদের জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়।যেঠুকো সম্পদ ব্যবহার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো বছর বছর সে সম্পদ বিক্রি করে এক পর্যায়ে তারা নিঃশ হয়ে যায়। তাদের শিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে যাদেরকে ভিটে-মাটি বিক্রি করে লেখা পড়া শিখিয়েছে তাদের ভাগ্যে চাকুরি জুটে না।কারণ ঘোষ দেওয়া ছাড়্ াএ দেশে চাকুরি পাওয়া কতটা কঠিন তা কেবল ভোক্তভোগীই জানে। জলবায়ু ও ভৌগুলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ।
এ দেশের সামগ্রীক অর্থব্যবস্থা পূজিবাদি বান্ধব হওয়ায় শিক্ষিত, অল্পক্ষিত ও বিশেষ কোন বিষয়ে
দক্ষতাসম্পন্ন লোক সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা ও অর্থসহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা নিজেদের উদ্যোগে কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে না। বাধ্য হয়ে তারা চাকুরির পেছনে ছুটাছোটি করে।্উপর মহলে যাদের মামা চাচা আছে যাদের টাকা পয়সা আছে তাদের হয়তো চাকুরি হয়। উপর মহলে যাদের কেউ নেই লেখা পড়া করতে গিয়েই যাদের ভিটে-মাঠি বিক্রি করতে হয়েছে তারা চাকুরির পেছনে ছুটতে ছুটতে অবশেষে শিক্ষিত বেকারের কালিমা কপালে লাগিয়ে জীবন পার করতে হয় তাদের। ¯^ল্প পূঁজির ছোট ব্যবসায়ি কিংবা গ্রামের সাধারণ কৃষক যখন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন গ্রহণ করে পরিশোধ করতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে তখন তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।অথচ শেয়ার মার্কেট, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে তাদের কিছুই হয় না। তাদের হাতে হাতকড়া পরাবার সাহস যেন কারো নেই।বিসমিল্লাহ গ্রæপ,হলমার্ক এরকম ভূইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় ঋন প্রদান করা হয় যে টাকা দেশের জনগনের কল্যাণে কোন উৎপাদনশীল কাজে খরচ হয় না।এ টাকা বিদেশে পাচার করে নিরাপদে জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি করে যারা তারা দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আলিশান বাড়িতে রাজকীয় জীবন যাপন করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন