যুগে যুগে প্রেম
সাদেক আহমেদ
নারী-পুরুষষের গভীর আস্থা, পারষ্পরিক নির্ভশীলতা ও প্রচন্ড আবেগের সুতোয় বাঁধা যে সম্পর্ক তারই নাম প্রেম। বাংলাভাষায় এর প্রতি শব্দ ভালোবাসা। বাংলাভাষাবাসি যারা তারা ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে একে অপরকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। পান্তরে ইংরেজি ভাষাবাসি যারা তারা ‘আই লাভ ইউ’ বলে ভালোবাসার কথা জানায়। হিন্দি ভাষাবাসি যারা তারা ‘মুজে তুমসে পিয়ার কারতিহু’ বলে ভালোবাসার কথা জানায়। বাংলা, ইংরেজি, আরবি,উর্দু হিন্দি ফার্সি নাগরি যে যে ভাষায়ই তার ভালোবাষার কথা জানাক না কেন তার জন্ম মানুষের মস্তিষ্কে। চোখ দিয়ে দেখে ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে মানুষের মগজে তৈরি হয় এর মূল রসায়ন। বয়স বিবেচনায় মানুষের দৈহিক কর্মকা-ে বা সারিরিক কাঠামোতে রদবদল দেখা গেলেও ভালোবাসায় কখনো জোয়ার-ভাটা দেখা যায় না। ছুট্ট একটি শিশুও কাঁদতে জানে-হাসতে জানে। মায়ের আদর সোহাগে আমরা তাকে হাসতে দেখি। একটুখানি কষ্ট পেলে আমরা তাকে কাঁদতে দেখি। তাই প্রেমের কোন বয়স নেই নর-নারী শিশু, যুবক, বৃদ্ধ যে বয়সেরই হোক না কেন তার উর্বর মস্তিষ্কে প্রেমের ফসল চাষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বয়স, পারষ্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক-ভৌগোলিক অবস্থার ভিন্নতার কারণে এর প্রকাশধরন ও স্বরূপ ভিন্নতর হতে পারে। প্রেমের নির্দিষ্ট কোন সজ্ঞা নেই। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিক ও দার্শনিকগন এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবে। কেউ বলেছেন ‘দুজন নির্বোধ মানুষের নিরর্থক কাজ হচ্ছে প্রেম’।পন্ডিত রুজম বলেন,বিরহের ুেবদনাই প্রেম।টলস্টয় বলেন,প্রেমবিবাহকে পবিত্র করে আর বিবাহ প্রেমকে পবিত্র করে। এক দিন প্লেটু তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে ছিলো-প্রেম কি? তিনি বলেন ঐ যে মাঠে গমের ফসল দেখতে পাচ্ছ তার মধ্য দিয়ে হেটে যাও গমের যে শিষটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালোলাগবে সেটি আমার কাছে নিয়ি এসো, কখনো পেছনে ফিরবে না, পেছনে ফেলে আসা গমের শিষ হাতে নেবে না। কথামতে প্লেটু একটি গমের শিষ এনে দিলেন শিক্ষক বললেন কি দেখতে পেয়েছ? প্লেটু জানান আমি যখন শষ্যের মাঠ দিয়ে সামনে এগুচিছলাম তখন যে গমের শিষটি চোখে পড়েছিলো সেটি আমার ভালোলেগেছিলো তবে মনে হয়েছিলো আর একটু সামনে এগয়ে দেখি। এভাবে সবশেষে যে গমের শিষটি আমি দেখতে পেলাম তা দেখে মনে হয়েছিলো আগেরটিই হয়তো এর চেয়ে ভালো ছিলো। শিক্ষক বললেন এটাই প্রেম।মহাকবি কালিদাস-মানদিপা, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও- জুলিয়েট, বেহুল-লক্কিন্দর, রাম-সীতা, রাধা-কৃষ্ণ, রজকীনি-চন্ডি দাস, উইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টা ও ইউসুফ-জুলেকা জয়ানন্দ-চন্দ্রাবতী এই পবিত্র মন্ত্রে দিা নিয়েই আজও অমর হয়ে আছেন। সম্রাট শাহজান তাদেরই একজন উত্তরসুরি যিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার স্মৃতির মিনার সাজিয় ছিলেন যমুনা নদীর তীরে আগ্রাবাদে র্স্বণখচিত সুরম্য প্রাসাদ তাজমহল নির্মাণ করে। জগতে এমন অসংখ্য সৃ্িষ্ট অকৃত্তিম ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে টিকে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সকল মানুষের কাছে তারা কিংবদন্তির রূপকার। তাদের নিয়ে আজও কবি লিখেন কবিতা,নাট্যকার লিখেন নাটক। সময় বদলায় পারিপার্শিক অবস্থার পরিবর্তন হয় ভালোবাসার স্বরূপ বদলায় না কোন কালেও। এ যেন সর্বকালে সর্বজনের কাছে স্বরূপেই আবির্ভূত হয়। আজকে হয়তো কৃষ্ণের বাশীর সুরে রাধা পাগল হয়ে বকুল তলে ছুটে আসে না, অশ্বারোহী রাজকুমার তার প্রেমিকাকে পাবার উম্মাদনায় যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, সুন্দরী নারীর প্রেমে পাগল হয়ে রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে কোন দেশ কোন জনবসতি বা কোন সভ্যতা ধ্বংস করে না। যেভাবে হেলেনের প্রেমের অনলে পুড়ে ধ্বংস হয়েছিলো ট্রয় নগরী। উইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টার প্রেমের মর্মন্তুদ পরিনতীতে ধ্বংস হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়া।ধুঁয়া,টাকা ও প্রেম এই তিন বিষয় কখনো গোপন থাকে না।যদিও প্রেমে পক্ষ দুটি তবুও প্রথমে ঘনিষ্ঠজন পরে বন্ধু-বান্ধব,তারপর আত্মিয়স্বতজন ও পরে পাড়া-প্রতিবেশি বিষয়টি জেনে যায়।কখনো কখনো শুরু হয় নতুন বিপত্তি।সুদুর অতীত থেকে অদ্যবধিই এমন বিপত্তির শিকার হয়ে পরিবার থেকে বিতারিত হয়েছে, সমাজ থেকে বিতারিত হয়েছে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে।যিশুখীষ্টের জন্মের বহু আগে মহাকবি কালি দাসের জগৎ বিখ্যাত সৃষ্টি মেঘদুৎ প্রেমের এমনই এক বেদনাবিদুর পরিনতির ফসল। মহা কবি কালিদাস ও তার প্রিয়তমা মান্দিপার প্রেমের খবর প্রকাশের পর কালিদাসকে তার জনপদ থেকে এক নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলো।একাকী জীবনের কষ্ট আর প্রিয়তমার অনুপস্থিতিজতনিত হৃদয়ের ব্যকুলতা এমনি মূহুর্তে আকাশে ভাসমাণ মেঘমালার দিকে তাকিয়ে তিনি মনের যে আকোতি প্রকাশ করতেন তাই ‘মেঘদুৎ’ কাব্যগ্রন্থের কাব্য পংক্তি ।তবে এ যুগেও মানুষ প্রেম করে । প্রেমিক মন মানে না কোন শাসন বারণ। তবে এ যুগে প্রেমের ধরন বদলে গেছে। এখন প্রেম হয় মোবাইল ফোনে। কথা হয় শেষ রাতে সংগুপনে। মিলন হয় কলেজ হোষ্টেলে,ছাত্রাবাসে, রেষ্টুরেন্টে পার্ক কিংবা সিনামাহলে। দামী উপহার, দামী খাবার, মোটা অংকের টাকা বা বিশেষ কোন সুবিধা আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ যুগের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের ইতিহাস। একটা বিশ্বাস যা হৃদয়ে ধারন করবে,একটা স্বপ্ন যার আলোতে সারাটা জীবন পথ চলবে এমনটি বিনিময় করে এ যুগের রাধা–-কৃষ্ণ এদের সংখ্যা অতিব নগন্য। যে প্রেমের সার্থক পরিনতি আছে তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা দুটি মানুষের এক নতুন জীবনের পথে একই সাথে পথচলা। এ জীবনে অভিন্ন কোন স্বপ্ন নেই,অভিন্ন কোন চাওয়া নেই, অভিন্ন কোন স্বার্থ নেই। স্বর্গের সুখ মর্তের শান্তি দুজনেরই সমান সমান। প্রেমের ব্যর্থ পরিনতির মধ্য দিয়ে মৃত্যু ঘটে একটি স্বপ্নের। মানুষের মৃত্যুর শোক সয়ে নেয়া যায় ভুলে থাকা যায় কিন্তু কোন স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটে এ শোক ভুলে থাকা যায় না, সারাটাজীবন এ মর্মন্তুদ ব্যদনার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। কখনোবা এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় চির অচেনা অন্য এক মানুষের। তখন কোন একজনের প্রিয় সঙ্গীত হয়-‘ভালোবাসা মোরে করেছে ভিখারি তোমকে করেছে রাণী’। বদলে যাওয়া এ মানুষগুলোর করুণ পরিনতির জন্য দায়ি কে? বাল্যপ্রেমের এমন পরিনতি আজকের সমাজে কোন বিরল ঘটনা নয়। কারণ যে সম্পর্কের ভিত্তি কেবলই যৌনতা ও বস্তুুগত সার্থ সে সম্পর্ক বেশি দুর এগুতে পারে না। তবে বাল্যপ্রেম যদি বস্তুগত স্বার্থে উর্ধ্বে থেকে বিশ্বাসের আলোতে পথ চলে সফল পরিনতিতে যায় তখন শুরু হয় দাম্পত্য প্রেম, যেখানে কে আগে দেবে কে পরে দেবে, কে কম পেলো কে বেশি পেলো বস্তুগত বিষয়ে এমন প্রশ্ন ওঠে না। দুজনের বিশ্বাস রক্তকনায় মিশে গিয়ে যেন একাকার হয়ে যায় ভিন্ন আত্মা অভিন্ন বিশ্বাসে অভিন্ন কামনায় শুরু হয় মধুর জীবন যে জীবনে ঐর্শযের অভাব থাকলেও সুখের অভাব হয় না। যদি বিশ্বাসের কমতি থাকে লালসার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয় তবে শুরু হয় পরকীয়াপ্রেম শুরু হয় নদীর এক তীর ভেঙ্গে আরেক তীর গড়বার অবৈধ প্রেম লিলা যা কেবল ব্যক্তিজীবনকে অশানিÍর আগুনে পোড়িয়ে মারে না বরং গোটা সমাজকে কলঙ্কৃত করে। প্রেম চিরন্তন প্রেম সার্বজনীন জলবায়ু ও ভৌগলিক অবস্থার পার্থক্যের কারণে এর প্রকাশ ও ধরন বৈচিত্রময়। আমাদের এই ভূখ-ে ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনর ফলে মানুষের জীবন যাপনে যেমন পশ্চিমা ভাবধারার ছোঁয়া ল্য করা যায়, তেমনি ভালোবাসা নামের পবিত্র সম্পর্কের অন্তরালে এক শ্রেণীর অসৎ মানুষের অনৈতিক কর্মকান্ড যা কেবল যৌনতা ও বস্তুগত লোভ লালসার কারণ, যার ফলে সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবাধ যৌনতা, বিবাহবিচেছদ, পরকিয়া প্রেম, তরুণ সমাজে মাদকের ভয়াবহ আসক্তি পারিবারিক কলহ, বিবাহবিচেছদ, সামাজিক অস্থিরতা মূল্যবোধের অবয় এর ক্ষতিকর প্রভাবে ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে।
সাদেক আহমেদ
নারী-পুরুষষের গভীর আস্থা, পারষ্পরিক নির্ভশীলতা ও প্রচন্ড আবেগের সুতোয় বাঁধা যে সম্পর্ক তারই নাম প্রেম। বাংলাভাষায় এর প্রতি শব্দ ভালোবাসা। বাংলাভাষাবাসি যারা তারা ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে একে অপরকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। পান্তরে ইংরেজি ভাষাবাসি যারা তারা ‘আই লাভ ইউ’ বলে ভালোবাসার কথা জানায়। হিন্দি ভাষাবাসি যারা তারা ‘মুজে তুমসে পিয়ার কারতিহু’ বলে ভালোবাসার কথা জানায়। বাংলা, ইংরেজি, আরবি,উর্দু হিন্দি ফার্সি নাগরি যে যে ভাষায়ই তার ভালোবাষার কথা জানাক না কেন তার জন্ম মানুষের মস্তিষ্কে। চোখ দিয়ে দেখে ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে মানুষের মগজে তৈরি হয় এর মূল রসায়ন। বয়স বিবেচনায় মানুষের দৈহিক কর্মকা-ে বা সারিরিক কাঠামোতে রদবদল দেখা গেলেও ভালোবাসায় কখনো জোয়ার-ভাটা দেখা যায় না। ছুট্ট একটি শিশুও কাঁদতে জানে-হাসতে জানে। মায়ের আদর সোহাগে আমরা তাকে হাসতে দেখি। একটুখানি কষ্ট পেলে আমরা তাকে কাঁদতে দেখি। তাই প্রেমের কোন বয়স নেই নর-নারী শিশু, যুবক, বৃদ্ধ যে বয়সেরই হোক না কেন তার উর্বর মস্তিষ্কে প্রেমের ফসল চাষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বয়স, পারষ্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক-ভৌগোলিক অবস্থার ভিন্নতার কারণে এর প্রকাশধরন ও স্বরূপ ভিন্নতর হতে পারে। প্রেমের নির্দিষ্ট কোন সজ্ঞা নেই। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিক ও দার্শনিকগন এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবে। কেউ বলেছেন ‘দুজন নির্বোধ মানুষের নিরর্থক কাজ হচ্ছে প্রেম’।পন্ডিত রুজম বলেন,বিরহের ুেবদনাই প্রেম।টলস্টয় বলেন,প্রেমবিবাহকে পবিত্র করে আর বিবাহ প্রেমকে পবিত্র করে। এক দিন প্লেটু তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে ছিলো-প্রেম কি? তিনি বলেন ঐ যে মাঠে গমের ফসল দেখতে পাচ্ছ তার মধ্য দিয়ে হেটে যাও গমের যে শিষটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালোলাগবে সেটি আমার কাছে নিয়ি এসো, কখনো পেছনে ফিরবে না, পেছনে ফেলে আসা গমের শিষ হাতে নেবে না। কথামতে প্লেটু একটি গমের শিষ এনে দিলেন শিক্ষক বললেন কি দেখতে পেয়েছ? প্লেটু জানান আমি যখন শষ্যের মাঠ দিয়ে সামনে এগুচিছলাম তখন যে গমের শিষটি চোখে পড়েছিলো সেটি আমার ভালোলেগেছিলো তবে মনে হয়েছিলো আর একটু সামনে এগয়ে দেখি। এভাবে সবশেষে যে গমের শিষটি আমি দেখতে পেলাম তা দেখে মনে হয়েছিলো আগেরটিই হয়তো এর চেয়ে ভালো ছিলো। শিক্ষক বললেন এটাই প্রেম।মহাকবি কালিদাস-মানদিপা, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও- জুলিয়েট, বেহুল-লক্কিন্দর, রাম-সীতা, রাধা-কৃষ্ণ, রজকীনি-চন্ডি দাস, উইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টা ও ইউসুফ-জুলেকা জয়ানন্দ-চন্দ্রাবতী এই পবিত্র মন্ত্রে দিা নিয়েই আজও অমর হয়ে আছেন। সম্রাট শাহজান তাদেরই একজন উত্তরসুরি যিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার স্মৃতির মিনার সাজিয় ছিলেন যমুনা নদীর তীরে আগ্রাবাদে র্স্বণখচিত সুরম্য প্রাসাদ তাজমহল নির্মাণ করে। জগতে এমন অসংখ্য সৃ্িষ্ট অকৃত্তিম ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে টিকে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সকল মানুষের কাছে তারা কিংবদন্তির রূপকার। তাদের নিয়ে আজও কবি লিখেন কবিতা,নাট্যকার লিখেন নাটক। সময় বদলায় পারিপার্শিক অবস্থার পরিবর্তন হয় ভালোবাসার স্বরূপ বদলায় না কোন কালেও। এ যেন সর্বকালে সর্বজনের কাছে স্বরূপেই আবির্ভূত হয়। আজকে হয়তো কৃষ্ণের বাশীর সুরে রাধা পাগল হয়ে বকুল তলে ছুটে আসে না, অশ্বারোহী রাজকুমার তার প্রেমিকাকে পাবার উম্মাদনায় যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, সুন্দরী নারীর প্রেমে পাগল হয়ে রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে কোন দেশ কোন জনবসতি বা কোন সভ্যতা ধ্বংস করে না। যেভাবে হেলেনের প্রেমের অনলে পুড়ে ধ্বংস হয়েছিলো ট্রয় নগরী। উইলিয়াম সিজার-কিউপেট্টার প্রেমের মর্মন্তুদ পরিনতীতে ধ্বংস হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়া।ধুঁয়া,টাকা ও প্রেম এই তিন বিষয় কখনো গোপন থাকে না।যদিও প্রেমে পক্ষ দুটি তবুও প্রথমে ঘনিষ্ঠজন পরে বন্ধু-বান্ধব,তারপর আত্মিয়স্বতজন ও পরে পাড়া-প্রতিবেশি বিষয়টি জেনে যায়।কখনো কখনো শুরু হয় নতুন বিপত্তি।সুদুর অতীত থেকে অদ্যবধিই এমন বিপত্তির শিকার হয়ে পরিবার থেকে বিতারিত হয়েছে, সমাজ থেকে বিতারিত হয়েছে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে।যিশুখীষ্টের জন্মের বহু আগে মহাকবি কালি দাসের জগৎ বিখ্যাত সৃষ্টি মেঘদুৎ প্রেমের এমনই এক বেদনাবিদুর পরিনতির ফসল। মহা কবি কালিদাস ও তার প্রিয়তমা মান্দিপার প্রেমের খবর প্রকাশের পর কালিদাসকে তার জনপদ থেকে এক নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে ছিলো।একাকী জীবনের কষ্ট আর প্রিয়তমার অনুপস্থিতিজতনিত হৃদয়ের ব্যকুলতা এমনি মূহুর্তে আকাশে ভাসমাণ মেঘমালার দিকে তাকিয়ে তিনি মনের যে আকোতি প্রকাশ করতেন তাই ‘মেঘদুৎ’ কাব্যগ্রন্থের কাব্য পংক্তি ।তবে এ যুগেও মানুষ প্রেম করে । প্রেমিক মন মানে না কোন শাসন বারণ। তবে এ যুগে প্রেমের ধরন বদলে গেছে। এখন প্রেম হয় মোবাইল ফোনে। কথা হয় শেষ রাতে সংগুপনে। মিলন হয় কলেজ হোষ্টেলে,ছাত্রাবাসে, রেষ্টুরেন্টে পার্ক কিংবা সিনামাহলে। দামী উপহার, দামী খাবার, মোটা অংকের টাকা বা বিশেষ কোন সুবিধা আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ যুগের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের ইতিহাস। একটা বিশ্বাস যা হৃদয়ে ধারন করবে,একটা স্বপ্ন যার আলোতে সারাটা জীবন পথ চলবে এমনটি বিনিময় করে এ যুগের রাধা–-কৃষ্ণ এদের সংখ্যা অতিব নগন্য। যে প্রেমের সার্থক পরিনতি আছে তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা দুটি মানুষের এক নতুন জীবনের পথে একই সাথে পথচলা। এ জীবনে অভিন্ন কোন স্বপ্ন নেই,অভিন্ন কোন চাওয়া নেই, অভিন্ন কোন স্বার্থ নেই। স্বর্গের সুখ মর্তের শান্তি দুজনেরই সমান সমান। প্রেমের ব্যর্থ পরিনতির মধ্য দিয়ে মৃত্যু ঘটে একটি স্বপ্নের। মানুষের মৃত্যুর শোক সয়ে নেয়া যায় ভুলে থাকা যায় কিন্তু কোন স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটে এ শোক ভুলে থাকা যায় না, সারাটাজীবন এ মর্মন্তুদ ব্যদনার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। কখনোবা এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় চির অচেনা অন্য এক মানুষের। তখন কোন একজনের প্রিয় সঙ্গীত হয়-‘ভালোবাসা মোরে করেছে ভিখারি তোমকে করেছে রাণী’। বদলে যাওয়া এ মানুষগুলোর করুণ পরিনতির জন্য দায়ি কে? বাল্যপ্রেমের এমন পরিনতি আজকের সমাজে কোন বিরল ঘটনা নয়। কারণ যে সম্পর্কের ভিত্তি কেবলই যৌনতা ও বস্তুুগত সার্থ সে সম্পর্ক বেশি দুর এগুতে পারে না। তবে বাল্যপ্রেম যদি বস্তুগত স্বার্থে উর্ধ্বে থেকে বিশ্বাসের আলোতে পথ চলে সফল পরিনতিতে যায় তখন শুরু হয় দাম্পত্য প্রেম, যেখানে কে আগে দেবে কে পরে দেবে, কে কম পেলো কে বেশি পেলো বস্তুগত বিষয়ে এমন প্রশ্ন ওঠে না। দুজনের বিশ্বাস রক্তকনায় মিশে গিয়ে যেন একাকার হয়ে যায় ভিন্ন আত্মা অভিন্ন বিশ্বাসে অভিন্ন কামনায় শুরু হয় মধুর জীবন যে জীবনে ঐর্শযের অভাব থাকলেও সুখের অভাব হয় না। যদি বিশ্বাসের কমতি থাকে লালসার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয় তবে শুরু হয় পরকীয়াপ্রেম শুরু হয় নদীর এক তীর ভেঙ্গে আরেক তীর গড়বার অবৈধ প্রেম লিলা যা কেবল ব্যক্তিজীবনকে অশানিÍর আগুনে পোড়িয়ে মারে না বরং গোটা সমাজকে কলঙ্কৃত করে। প্রেম চিরন্তন প্রেম সার্বজনীন জলবায়ু ও ভৌগলিক অবস্থার পার্থক্যের কারণে এর প্রকাশ ও ধরন বৈচিত্রময়। আমাদের এই ভূখ-ে ভিনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনর ফলে মানুষের জীবন যাপনে যেমন পশ্চিমা ভাবধারার ছোঁয়া ল্য করা যায়, তেমনি ভালোবাসা নামের পবিত্র সম্পর্কের অন্তরালে এক শ্রেণীর অসৎ মানুষের অনৈতিক কর্মকান্ড যা কেবল যৌনতা ও বস্তুগত লোভ লালসার কারণ, যার ফলে সমাজে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবাধ যৌনতা, বিবাহবিচেছদ, পরকিয়া প্রেম, তরুণ সমাজে মাদকের ভয়াবহ আসক্তি পারিবারিক কলহ, বিবাহবিচেছদ, সামাজিক অস্থিরতা মূল্যবোধের অবয় এর ক্ষতিকর প্রভাবে ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন